Story of a Three Friends
শিরোনাম: সময়ের বাঁধন – রামপুরের তিন বন্ধুর গল্প
শান্ত, সবুজে মোড়া ছোট্ট শহর রামপুর। এই শহরের বুকেই একসাথে বড় হয়েছিল তিন বন্ধু — আয়ান, ঋষি, আর জয়া।
একই বছরে জন্ম, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে। হাঁটতে শেখার পর থেকে ওরা একসাথে দৌড়েছে — সরিষা ফুলের মাঠে, বর্ষার কাঁদা রাস্তায়, আর স্কুলের মাঠে স্বপ্নের পেছনে। ওদের বন্ধুত্ব শুধু সময় নয়, বিশ্বাসেও গড়া।
---
শৈশবের দিনগুলো
আয়ান ছিল স্বপ্নবাজ — রঙে আঁকতো নিজের ভাবনা, আকাশ আর তারায় হারিয়ে যেত। ঋষি ছিল চুপচাপ, কিন্তু মেধাবী — ভাঙা সাইকেল হোক বা মন, সব কিছু ঠিক করে ফেলত। আর জয়া? সে ছিল আগুন — হাসিখুশি, সাহসী, আর স্পষ্টভাষী।
ওদের পৃথিবী ছিল সহজ — স্কুল, মন্দিরের মাঠে সন্ধ্যার ক্রিকেট, আর নদীর ধারে সূর্য ডোবার সময় কথা বলা। একবার ওরা প্রতিজ্ঞা করেছিল — বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে — “আমরা কখনো আলাদা হব না।”
---
বাঁক বদলের সময়
কিন্তু সময় থেমে থাকে না।
হাই স্কুলের পরে জীবনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেল। আয়ান দিল্লি চলে গেল আর্ট কলেজে। ঋষি রয়ে গেল, বাবার রিপেয়ার দোকানে সাহায্য করতে লাগল। জয়া সিভিল সার্ভিসে সিলেক্ট হয়ে গেল, চলে গেল লখনউ।
মোবাইলে কথা কমে গেল। দেখা হওয়া প্রায় বন্ধ।
বছর কেটে গেল। রামপুর একই রইল, কিন্তু ওদের জীবন পালটে গেল — ব্যস্ত হয়ে উঠল, জটিল হয়ে উঠল।
---
ফিরে আসা
এক শীতের সকালে খবর এল — ঋষির বাবা মারা গেছেন।
জয়া ছুটি নিয়ে ছুটে এল। আয়ান তার আর্ট শো বাতিল করে ফিরে এল।
রামপুর ঠিক আগের মতো — চায়ের দোকানে সেই কড়ক চা, নদীর ধারে সেই নরম হাওয়া, আর সেই পুরনো বটগাছ। কিন্তু ওরা যখন একে অপরকে দেখল, একটা নীরবতা নেমে এল — ওরা বড় হয়েছে, কিন্তু ভেতরের কিছু একটাও বদলায়নি।
একসাথে এক সপ্তাহ কাটাল — দোকান পরিষ্কার করল, পুরনো গল্পে হাসল, আর চোখের জল লুকিয়ে দুঃখ ভাগ করে নিল।
সেই ছোট্ট শহরে, পুরনো পথের মোড়ে, বন্ধুত্ব ফিরে এল — এবার শিশু নয়, বরং পরিণত, গভীর আর সত্যিকারের।
---
নতুন অধ্যায়
আজ আয়ান রামপুরে শিশুদের জন্য আর্ট ওয়ার্কশপ চালায়। জয়া প্রতি মাসে আসে, একটা লাইব্রেরি খুলেছে তার নামে। আর ঋষি? সে পুরনো দোকানটাকে কফি ক্যাফে বানিয়েছে — নাম দিয়েছে "বটবৃক্ষ কফি", যেখানে চায়ের সাথে গল্পও মেলে।
রামপুরবাসী বলে, ওরা ভাগ্যবান।
কিন্তু ওরা বলে,
“এটা ভাগ্য নয় — এটা ভালোবাসা, সময়, আর রামপুর।”
এইভাবেই চলতে থাকে ওদের গল্প — না বড় শহরে, না পত্রিকার পাতায়, বরং সেই নিরিবিলি রাস্তায়, যেখানে তিন বন্ধুর বন্ধন আজও অটুট।
Comments
Post a Comment